পৃথিবীখ্যাত ৮ জন সফল ব্যক্তির গল্প

টিবিটি ডেস্ক
টিবিটি ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৫২ এএম

কোনকিছু একেবারে শেষ হয়ে যাবার ঠিক আগ মূহুর্তে ঝুঁকি নেওয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে চলে আসে। কারণ, এর থেকে ভালো কিছুও ঘটে যেতে পারে। তাই কোনো কোনো সময় ঝুঁকি নেওয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়।


জগতের বেশিরভাগ সফল মানুষের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে। কিন্তু এর বিপরীতেও যুক্তি দেখানো যায়।



প্রশ্ন করা যায়, “কোনো ক্ষেত্রে সাফল্যের ক্ষীণ হাতছানি থাকা সত্ত্বেও, কেন আপনি সবটুকু উজাড় করে দিয়ে ঝুঁকি নিতে যাবেন?”


আসলে কোন কিছুর শেষ চেষ্টা করে, সেখান থেকে সফলভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পারা,  এক ধরণের সুখকর অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। অনেকটা ভোর দেখার আগে গভীর রাতে ভীত হওয়ার মত। ঝুঁকিকে গ্রহণ করে সফলতা অর্জন করেছেন এমন আটজন সফল ব্যক্তির গল্প নিয়ে আজকের আলোচনা।


একেবারে বিরূপ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা আপনাকে নিজের সামর্থ্যের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। তারপর আপনার আত্মবিশ্বাস সামনে চলার পথে পাথেয় হয়ে দাঁড়াবে।



মূল আলোচনায় যাওয়ার একটা প্রশ্ন করা যক, আপনার জীবনে এমন কি কোন ঝুঁকি নিয়েছিলেন, সময়ের বিচারে যেটা আপনার কাছে এখন সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে হয়?


অথবা সে ঝুঁকিটি না নিলে আপনি আপনার জীবনে অনেক বড় কিছু থেকে বঞ্চিত হতেন? এখনি কমেন্ট করে আপনার অভিজ্ঞতার কথা জানান।



ঝুঁকি ও সফলতার উদাহরণে সফল ব্যক্তিদের কথা প্রথমে আসে। কারণ সফল হবার আগে তারাও আমাদের মত সাধারণ মানুষ ছিলেন। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত আর ঝুঁকি নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে তারা আজ একেকটি দৃষ্টান্ত। জেনে নিন এই মহান ৮ সফল ব্যক্তির গল্প, যারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে সফল হয়েছেন।



১. ইলন মাস্ক


ইলন মাস্ক টেসলা মটরস ও স্পেস এক্সের প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রতিষ্ঠান দুইটির চমৎকার সাফল্য তাকে বিশ্বের ১২তম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। কিন্তু সাফল্যের চূড়ায় পৌছানোর আগে তিনি অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন।


নিজের প্রতিষ্ঠা করা প্রতিষ্ঠান পেপালের লভ্যাংশ থেকে কিছু মূলধন নিয়ে নিজের আগ্রহ থেকে নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। মঙ্গলগ্রহে সত্যিকারের একটি কলোনি স্থাপন তার স্বপ্ন ছিলো। এর ফলে তিনি সুলভ মূল্যে সেবা দিতেন।



এভাবেই SpaceX এর যাত্রা শুরু। যাই হোক, কোম্পানিটির প্রথম তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপণ ব্যর্থ হয় এবং দেওলিয়া হওয়ার পর্যায়ে চলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কেবল একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের জন্যে পর্যাপ্ত অর্থ ছিলো।


ইলন এই অর্থ দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ না করে অন্যকিছুতে বিনিয়োগ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি চতুর্থবারের মত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেন এবং সফল হন। ইলনের আরেকটি শখ ছিলো – নবায়নযোগ্য শক্তি দিয়ে পরিচালিত গাড়ি।


২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে টেসলা তাদের প্রথম গাড়ি বাজারে আনে। কিন্তু বাজার দাম দাঁড়ায় প্রত্যাশিত দামেরও দ্বিগুণ। ফলে টেসলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু মার্কেটিং আর পজিটিভ রিভিউয়ের মাধ্যমে এটি বাজার ধরে রাখে।





২) জেফ বেজস


কম্পিউটার বিজ্ঞানে ডিগ্রি নেওয়ার পরে, জেফ ওয়াল স্ট্রিটের অনেকগুলো ফার্মে কাজ করেছেন। এর সুবাদে ১৯৯০ সালে তিনি সবচেয়ে কম বয়সে কোন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হন।


সেসময়ে আর্কষণীয় বেতন, চাকুরীর স্থায়িত্ব, পদমর্যাদা সহ সবকিছু তার কাছে ছিলো। কিন্তু তিনি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে নতুন একটি পরিকল্পনা হাতে নিলেন। তিনি নিজের ব্যবসা শুরু করতে চাইলেন।



নতুন এ ব্যবসার জন্যে সিয়েটলে বসবাস শুরু করেন এবং সেখান থেকে আমাজন ডট কম তৈরীর জন্যে কাজ শুরু করেন। শুরুর দিকে এটি কেবল একটি অনলাইন বুকস্টোর ছিলো।


কাজ শুরুর মাত্র দুইমাসে মধ্যে এই স্টোরের বিক্রি ২০,০০০ ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে অ্যামাজন ডট কম অনলাইন শপের সবচেয়ে বড় স্থান দখল করে আছে। এই সফলতার ফলে জেফ এখন সম্পদশালীদের দিকে থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন।




৩) রবিন চেজ


নিজের পরিকল্পনার আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি দৃষ্টান্ত – রবিন চেজ। রবিন চেজ আর তার বান্ধবী অ্যান্টজি ড্যানিয়েলসন “ইন্টারনেট ভিত্তিক কার শেয়ারিং” এর একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।


কিন্তু প্রথমেই বাঁধার সম্মুখীন হন। প্রথমে বাধা হয় অপর্যাপ্ত পরিমাণ পুঁজি। অন্যদিকে, সেসময়ে রবিনের জন্যে একটি ব্যবসা শুরুর করার জন্যে পুঁজি করা কঠিন ছিলো। দ্বিতীয় বাধা হয় – ব্যবসার প্রসার। কারণ নব্বই দশকের দিকে ইন্টারনেটে প্রসার তেমন ছিলো না।



আরেকটি প্রধান কারণ – অপরিচিত কারো কাছে একজন গাড়ি শেয়ার করতে চাইবে না। এত সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে রবিন ২০০০ সালে “জিপকার” শুরু করেন। মাত্র দুইটি গাড়ি নিয়ে শুরু করা ব্যবসা আর নয় হাজার গাড়িতে এসে দাড়িয়েছে।



৪) বিল গেটস


বিল গেটসের স্বপ্ন ছিলো – সবার কাছে কম্পিউটার টেকনোলজি পৌঁছে দেওয়া। হাভার্ড থেকে ড্রপআউট হওয়া এই কিংবন্দন্তীর জন্যে তা করা খুব কঠিন ছিলো। কেননা তৎকালীন সময়ে স্টিভ জবস বিল গেটসের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দী ছিলেন।


স্টিভের অ্যাপল তখন কম্পিউটার টেকনোলজিতে ইতোমধ্যে বাজার দখল করে আছে। কিন্তু বিল গেটস তাই বলে পিছ-পা হলেন না। তিনি পার্সোনাল কম্পিউটারের সফটওয়্যার তৈরী মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ করতে চাইলেন।



তিনি বিশ্বাস করতেন এর মাধ্যমে অ্যাপলের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব। তার প্রতিষ্ঠা করা মাইক্রোসফট বর্তমানে অন্যতম টেকনোলজি জায়েন্ট হিসেবে পরিচিত। শুধু তাই নয়, বর্তমানে বিল গেটস বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তি।



৫) ল্যারি এলিসন


কম্পিউটারের উপর মূল দক্ষতা অর্জনের পর, ল্যারি ও তার দুইজন সহকর্মী ১৯৭৭ সালে “সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরিজ” নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি শুরু করেন।


পরবর্তীতে এটির নাম পরিবর্তন করে “Oracle Systems Corporation” রাখা হয়। ১৯৯০ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি হিসেবের গরমিলের কারণে এক রকমের দেওলিয়া হতে থাকে। 


এছাড়া সাথে যুক্ত হয় – অব্যবস্থাপনা ও শেয়ার বাজারে দরপতন। কিন্তু ল্যারি থেমে যান নি। তিনি নতুন টিমে গঠনের মাধ্যমে পুরো ক্ষতি পুষিয়ে নেন এবং একই সাথে লঞ্চ করেন ওরাকল সেভেন।




৬) ভেরা ওয়াং


ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল সময়ে পেশা পরিবর্তন একটি ঝুকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। স্কেটিং ক্যারিয়ারের পাশাপাশি তিনি ভোগ ম্যাগাজিনে কাজ শুরু করেন।


এক বছরের মধ্যে তিনি সিনিয়র ফ্যাশন এডিটর হিসেবে পদন্নতি পান। ১৫ বছর এই ম্যাগাজিনে কাজ করার পর, তিনি চাকুরী ছেড়ে দেন এবং র‍্যালফ লরেনের সাথে ডিজাইন ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন।



তারপর বাজার পর্যালোচনা করে তিনি দেখলেন তার তৈরী করা পোষাকগুলো সকলের জন্য উপযোগী নয়। এই ব্যর্থতা তাকে হতাশায় ঘিরে ধরে।


১৯৯০ সালে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন এভিনিউয়ের কার্লাইল হোটেলে তিনি বিয়ের পোষাকের ডিজাইন নিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার ব্যবসার প্রসার হয়। বিয়ের পোষাকের ডিজাইনে তিনি নিজের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন।



৭) ড্রিউ হিউস্টন


আত্নবিশ্বাসের আরেকটি মহিমার নাম – ড্রিউ হাউস্টোন। বাজারে আসার আগেই তিনি প্রতিযোগিতা ছুঁড়ে দেন অ্যাপেলের দিকে। অ্যাপেলের সার্ভিসের থেকে ভালো কিছু আসছে বলে আশ্বস্ত করেন।


ড্রিউ হাউস্টোন ও তার সহকর্মী আরাস ফেরদৌসী বিভিন্ন ডিভাইসে ফাইল শেয়ারের জন্যে সফটওয়্যার তৈরীর পরিকল্পনা করেন।


ঠিক সে সময়ে স্টিভ জবস “আই ক্লাউড” নামে একই ধরণের একটি সফটওয়্যার তৈরীর পরিকল্পনা করছিলেন। ড্রিউয়ের ড্রপবক্স বাজারে আসলে আই ক্লাউডের ব্যবসায় ঘাটতি পরে।


বর্তমানে ড্রপবক্স সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ফাইল শেয়ারিং সাইট। এর ব্যবহারকারী বর্তমানে প্রায় ৫০০ মিলিয়নের মত।




৮) রিচার্ড ব্র্যানসন


রিচার্ড ব্র্যানসন উদোক্তা মহলে খুবই পরিচিত একটি নাম। “স্টুডেন্ট ম্যাগাজিন” থেকে শুরু করা ব্যবসা “ভার্জিন রেকর্ডস” এ উন্নীত হলে তিনি কর ফাঁকির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এসময় তার মা বাড়ি বন্ধক রেখে সে ঋণ পরিশোধ করেন।


পরবর্তীতে তিনি ১৯৮৪ সালে এয়ারলাইন ব্যবসার সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। এটা তার জন্যে অনেক কঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো। কেননা সেসময়ে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ব্যবসা তুঙ্গে ছিলো। যার কারণে তিনি ব্যবসায় খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পারেননি।


পরবর্তীতে তিনি ৪৯ শতাংশ শেয়ার সিংগাপুর এয়ারওয়েজের কাছে বিক্রি করে দেন। বর্তমানে তার “ভার্জিন গ্রুপ” বিশ্বের ৩০টি দেশে ২০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে।


ঝুঁকি আমাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। প্রতিকূল পরিবেশে ঝুঁকি নিয়ে সফল হলে সেই সাফল্য পূর্ণতা পায়। এছাড়া এসময়ে নিজের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়।


নিজের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার সাফল্যের জন্যে অভিযাত্রীর পক্ষ থেকে শুভকামনা।